অধ্যবসায়
জীবনে সফল হতে চাই একাগ্রতা ও নিষ্ঠা। সফলতার পথের প্রথম এবং অনিবার্য শর্ত হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া ব্যক্তি জীবন কিংবা জাতীয় জীবন কোনো ক্ষেত্রেই সফলতা কল্পনাও করা যায় না। একমাত্র অধ্যবসায়ের বলেই মানুষ জীবনে চলার পথের সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে সফলতার শীর্ষে আরোহন করতে পারে।
যে কোনো কাজেই সফলতা ও ব্যর্থতা এ দু’টিই আসতে পারে। জীবনে সব কাজেই মানুষ প্রথমবারেই সফল হবে এমন নয়। কোনো কোনো কাজে প্রথমবার, এমনকী দ্বিতীয়, তৃতীয় বারেও সফলতা নাও আসতে পারে। কিন্তু তাই বলে ব্যর্থতাকে মেনে নিয়ে, হতাশ হয়ে, থেমে থাকলে চলবে না। বরং ধৈর্য ও নিষ্ঠার সাথে সফলতা না আসা পর্যন্ত চেষ্টা করে যেতে হবে। এরই নাম অধ্যবসায়। এ প্রসঙ্গে কবি যথার্থই বলেছেন-
‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর,
একবার না পারিলে দেখ শতবার।’
পবিত্র হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে- ‘যে চেষ্টা করে সেই পায়’। হাদিসের এই বাণী থেকেই একথা সুস্পষ্ট যে, মানবজীবনে অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। প্রতিটি ধর্মেই অধ্যবসায়কে মানুষের মহৎ গুণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পৃথিবীতে যা কিছু মহান, যা কিছু কল্যাণকর তা সবই অধ্যবসায়ের গুণে অর্জিত হয়েছে। অধ্যবসায় মানব সভ্যতার অগ্রগতির প্রথম সোপান। আদিম সভ্যতার বন্য মানুষ বর্তমানে বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত আধুনিক মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে মূলত অধ্যবসায়ের গুণেই। অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ যুগে যুগে জয় করেছে মহাসাগরের অতলগর্ভ, সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, এমনকী মহাকাশও। জীবনে চলার পথে প্রতি পদক্ষেপে যে ব্যক্তি অধ্যবসায়ের পরিচয় দিতে পারে সেই সফল। সুতরাং মানব জীবনে অধ্যবসায় অপরিহার্য।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব: ছাত্রজীবন ব্যক্তির মানস গঠনের শ্রেষ্ঠ সময়। পরবর্তী জীবন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হবার উপযুক্ত সময় এই ছাত্রজীবন। তাই ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুণ আয়ত্ত করা সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয়। অধ্যবসায় ব্যতীত ছাত্রজীবনে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব নয়। অলস ও শ্রমবিমুখ ছাত্র-ছাত্রী যতই মেধাবী হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সে বিদ্যার্জনে সফলতা লাভ করতে পারে না। অন্যদিকে একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র বা ছাত্রী স্বল্প মেধাসম্পন্ন হলেও ভালো ছাত্র হিসেবে নিজের কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে- ‘Failure is the pillar of success’ ব্যর্থ না হলে সফলতার মর্ম বোঝা যায় না। তাই একবার অকৃতকার্য হলে হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেওয়া বোকামি বরং অধ্যবসায়ের দ্বারা লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
মানুষ স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কেবল কথায় নয়, কাজের মধ্য দিয়ে মানুষকে এই শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দিতে হয়। আর এ জন্যে সর্বাগ্রে যে গুণটি আয়ত্ত করা প্রয়োজন তা হলো অধ্যবসায়। প্রত্যেক মানুষের মনে রাখা উচিত আল্লাহ তাদেরই সাহায্য করেন, যারা অধ্যবসায়ী এবং পরিশ্রমী। তাই সফলতার পথে এগিয়ে যেতে আমাদের সবাইকে হতে হবে অদম্য অধ্যবসায়ী।